•সামাজিক প্রথা ভেঙ্গে নতুন একটি সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যার কবিতা লেখার সূত্রপাত,দ্রোহ ও বিচ্ছেদানলে দগ্ধ যার দেহ,মন,আত্মা;সময়ের কাছে পরাজিত যার সত্তা,একজন বিপ্লবী,একজন উপন্যাসিক,একজন প্রাবন্ধিক,একজন কবি,একজন সাইফ সুমন যার প্রেম সময়ের সঙ্গে,যার সঙ্গম অবহেলার সঙ্গে,যার সংগ্রাম

অনাচারের বিরুদ্ধে,স্রোতের বিপরীতে যার পথচলা।কবি সাইফ সুমন মূলত কবি হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসলেও সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ”বিক্ষুব্ধ বলাকা” শীঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১-এ। বইটি প্রকাশ করছে রিদম প্রকাশনা সংস্থা।প্রকাশক গফুর হোসেন,প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন ফারিয়া হোসেন।আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হলেও বইটির বাঁধাই শেষ হয়েছে।ইতোমধ্যেই অনলাইনে বইটির অগ্রীম অর্ডার শুরু হয়েছে।বইটি নিয়ে পাঠক মহলে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।অনেক কবিতা প্রেমি বইটি সংগ্রহের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।কাব্যগ্রন্থ “বিক্ষুব্ধ বলাকা”য় মোট ২৯ টি কবিতা রয়েছে।কবি বইটি পৃথিবীর সকল ব্যর্থ মানুষের প্রতি উৎসর্গ করেছেন।

কবি সাইফ সুমনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণ বীণা” প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।দ্রোহ ও সমাজ বাস্তবতার আলোকে লিখিত বইটি তখন পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলো। ২০২০ সালে সময়ের আলোচিত উদীয়মান কবি সাইফ সুমনের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “বিধুর বেহালা” পেয়েছিলো ব্যাপক সফলতা।বিচ্ছেদকাতর ভাষায় লিখিত বইটির শব্দে-ছন্দে, চিত্র-কল্পে কবির পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ “বিক্ষুব্ধ বলাকা”।

কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে কবি বলেন, “বিক্ষুদ্ধ বলাকা”র ডানায় আজ ভর করেছে এক পৃথিবী রক্তরাঙ্গা মেঘ;বিক্ষুদ্ধ বলাকার কণ্ঠ জুড়ে আর্তনাদধ্বনি।একদিন স্বাধীন বলাকা’র একটা মুক্ত আকাশ ছিল,সে আকাশে চাঁদ ছিল;বলাকার তারা ভরা একটা মুক্ত আকাশ ছিল।দিনের শেষে গোধূলি আলোয় আপন মনে গান গেয়ে বলাকা তার নীড়ে ফিরে আসতো।আজ সবই কেবল দুঃসহ স্মৃতি।বিক্ষুব্ধ বলাকার আজ স্বাধীনভাবে উড়ার কোন আকাশ নেই;অচেনা কোন এক অবহেলার আগুনে পুড়ে গেছে সমস্ত আকাশ।সমস্ত আকাশ আজ অবরুদ্ধ ; রক্ত মেঘের ঘনঘটা সমস্ত আকাশ জুড়ে।বলাকার কন্ঠে আজ কোন গান নেই;বলাকার কণ্ঠনালী জুড়ে অবরিত রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’বিক্ষুদ্ধ বলাকা’ একটি শোকগাথা,পৃথিবীর সকল ব্যর্থ মানুষের কিছু অব্যক্ত কথার দলীল।”বিক্ষুদ্ধ বলাকা” কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি পংক্তি জুড়ে দ্রোহ ও শোকের মিছিল।”

‘তুমিও তাদের একজন’,’অত:পর আমি অমানুষ’,’আমার আত্মহত্যার পরে’,’শেকলে বাধা বর্ণমালা’,’নিহত নক্ষত্রের নিশিকান্না’,’বিষণ্ণ এ ব-দ্বীপে’,’অবিন্যস্ত অভিধান’,’দ্বিধা’,’আমি এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলছি’,’বিজয়ের প্রতীক্ষায়’,’অচেনা শ্রাবণ’,’নতুন আয়োজন’,’মধ্য দুপুরের অমাবশ্যা’,’অন্ধকারের ফুল’,’রক্তাক্ত রথ’ ইত্যাদি কবিতা সহ গ্রন্থের মোট ২৯ টি কবিতায় ছন্দ,গদ্য,অলংকারের যে সন্নিবেশ ও মিলন ঘটেছে তা পাঠক হৃদয়কে আলোড়িত করবে।
“বিক্ষুদ্ধ বলাকা” কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা “তুমিও তাদের একজন”কবিতায় কবি লিখেছেন-”

“তুমি তো তাদেরই একজন
যারা এক মনে রাখে বহুজন।
তুমিও তাদেরই একজন,
যাদের নষ্ট মনে চলে সদা নষ্ট আয়োজন।
তারা ‘ভালবাসি,ভালবাসি’ বলে
করবে প্রেমের সূচনা,
ক’দিন না যেতেই অন্তর থেকে
হয়ে যাবে চির অচেনা।
যারা ধারণ করে পাষাণ হৃদয়,
মনেপ্রাণে যারা চির নির্দয়,
যাদের হিংসা মনের আগুনে পুড়ে,
গোরস্থান হয় বিশ্ব ভুবন।
তুমি তো তাদেরই একজন!
যারা প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে,
হৃদয়টাকে অনলে পুড়িয়ে,
ক্ষতবিক্ষত করে দেহমন,
তুমি তো তাদেরই একজন,
যারা খুব যতনে বুকে টেনে নেয়,
বহুরূপী হয়ে স্বপ্ন দেখায়,
অবশেষে ভাঙ্গে স্বপ্ন সুখের ঘর।
এক নিমিষেই বদলে ফেলে
চিরচেনা কণ্ঠস্বর!
ভালবাসাকে যারা তুচ্ছ ভাবে
এমনও আছে বহুজন
তুমিও তাদেরই একজন।”

এরপর দ্বিতীয় কবিতা “অত:পর আমি অমানুষ” কবিতায় কবি লিখেছেন-

“আমার মরার পরে লাশটাকে তোরা পারলে শাস্তি দিস,
এ আত্মাকে ধরে যত খুশী সবাই ঢেলে দিস তাতে বিষ।
ভুলেও কখনও যাস না ভুলে এই অমানুষের নাম,
অমানুষের জন্যই তো সৃষ্টি এই বিশ্ব ধরাধাম!”

কাব্যগ্রন্থ বিক্ষুব্ধ বলাকার শেষ কবিতা “রক্তাক্ত রথ” এ কবি লিখেছেন-

“হাজার স্বপ্নের মহল আমার
ভেঙ্গে হয়েছে চুরমার,
আমার ভালবাসার নদীর বুকে
জেগেছে শোকের চর।
পিঞ্জিরা পাখি উড়াল দিয়েছে
অজানা গহীন বনে,
শত শপথের মালা ছিড়ে ফেলে
জ্বেলেছে অনল মনে।
এ জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার
নেই কোন আর পথ,
মাঝ পথে এসে কেন থেমে গেলো
আমার প্রেমের রথ?
আর ডেকো না ভুল নাম ধরে
যদি দেখা হয় কভু,
নিয়তির এ খেলা শেষ কবে হবে
জবাব দাও হে প্রভু।”

বিচ্ছেদকাতর মনের এক অসামান্য সৃষ্টি,এক অনবদ্য কাব্যকলার নাম “বিক্ষুদ্ধ বলাকা”।কষ্টের আগুনে পুড়ে ক্ষতবিক্ষত কবি হৃদয়ের পংক্তিগুলো সকল কবিতা প্রেমীর মন ছুঁয়ে যাবে;মনে রেখে যাবে কষ্টের কিছু স্থায়ী ছাঁপ আল্পনা।

পরিশেষে কবি বলেন,-“যত দিন মানুষ আছে,ততদিন কবিতা থাকবে;যতদিন কবিতা থাকবে ততদিন শোকের মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষুব্ধ বলাকা সাহিত্যের আকাশে উড়তে থাকবে;উড়তে থাকবেই।”

বইটির ব্যাপারে প্রকাশক গফুর হোসেন অনেক আশাবাদী।তিনি কবি,কবিতা ও বইমেলার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ২রা এপ্রিল ২০২১ রোজ শুক্রবার। কবি ও প্রকাশকের পক্ষ থেকে সকল পাঠককে বইটি সংগ্রহ করার আবেদন জানিয়েছেন।